তিব্বত, যা “বিশ্বের ছাদ” নামে পরিচিত, তার গড় উচ্চতা ৪,৫০০ মিটার ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য বিখ্যাত।
এই পাহাড়ি অঞ্চলটি শুধুমাত্র তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জন্যই নয়, বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের জন্যও উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে।
বিমান সংস্থাগুলো নিয়মিতভাবে তিব্বতের উপরে উড়ে যাওয়া এড়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলেছে, শুধুমাত্র উচ্চতার কারণে নয়, বরং সেই সঙ্গে যুক্ত ঝুঁকিগুলোর জন্য যা ফ্লাইটের নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে।
প্রেশারাইজেশন এবং উচ্চতার চ্যালেঞ্জ
তিব্বতের উপরে ফ্লাইট করার সময় বিমান সংস্থাগুলোর মুখোমুখি হওয়া প্রধান সমস্যাগুলোর একটি হলো কেবিনের প্রেশারাইজেশন।
ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুসারে, যদিও বিমানগুলো নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, প্রেশারাইজেশনে কোনো ব্যর্থতা হলে ক্রুদের দ্রুত এমন উচ্চতায় অবতরণ করতে হতে পারে যেখানে অক্সিজেন শ্বাস নেওয়ার উপযোগী।
তিব্বতে, এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, কারণ এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা (প্রায় ৪,৯০০ মিটার) নিরাপদ উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য সুপারিশকৃত উচ্চতা ছাড়িয়ে যায়।
এছাড়াও, পাহাড়ি ভূখণ্ড জরুরি অবতরণের জন্য উপযুক্ত স্থান সনাক্তকরণ কঠিন করে তোলে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ নিকোলাস লারেনাস উল্লেখ করেন যে “তিব্বতের অধিকাংশ অংশে উচ্চতা জরুরি/নিরাপত্তা উচ্চতার তুলনায় অনেক বেশি”, যা বিমান পরিচালনাকে আরও জটিল করে তোলে।
উচ্চ উচ্চতায় ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা
জেট ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতাও উচ্চতার কারণে প্রভাবিত হয়। উচ্চতায় বাতাস পাতলা এবং অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকে, যা ইঞ্জিনের দক্ষতাকে প্রভাবিত করে।
“জেট ইঞ্জিনগুলোর জ্বালানি পোড়াতে এবং ঠেলাধাকলা তৈরি করতে অক্সিজেনের প্রয়োজন,” মিডিয়াটি ব্যাখ্যা করে, পাতলা বাতাসে কাজ করার অসুবিধা তুলে ধরে। এর ফলে তিব্বতে বিমানের কার্যক্ষমতা এবং নিরাপত্তা কমে যায়।
আবহাওয়া পরিস্থিতি এবং বিমান নিয়মাবলী
তিব্বতের আবহাওয়া অত্যন্ত অনিশ্চিত, হঠাৎ ঝড় এবং তীব্র অস্থিরতা ফ্লাইটের জন্য অতিরিক্ত ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
পাইলটরা বিমান স্থিতিশীল রাখতে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন, যা এই অঞ্চলে বিমান চলাচলকে আরও কঠিন করে তোলে।
এছাড়াও, তিব্বতের আকাশসীমা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় কঠোর নিয়মাবলীর আওতাধীন।
এই নিয়মাবলী শুধুমাত্র বিমান সংস্থাগুলোর জন্য উপলব্ধ রুট সীমাবদ্ধ করে না, বরং এই কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করা পাইলটদের জন্য বিশেষ সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তাও নির্ধারণ করে।
এয়ার হরাইজন্ট উল্লেখ করেছে যে, যদিও অধিকাংশ যাত্রীবাহী বিমান ৫,০০০ মিটার উচ্চতায়ও উড়তে পারে, তিব্বতে জরুরি অবস্থা সমস্যাযুক্ত কারণ নিরাপত্তার যেকোনো উচ্চতা অঞ্চলের উচ্চতার নিচে থাকে।
সার্বিকভাবে, তিব্বতের উপরে উড়ে যাওয়া বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার কারণে এই অঞ্চল এড়ানোই শ্রেয়।
সঠিক প্রেশারাইজেশনের প্রয়োজনীয়তা থেকে শুরু করে জরুরি অবতরণের স্থান সংকট, ইঞ্জিন কর্মক্ষমতার সমস্যা এবং প্রতিকূল আবহাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি কারণই বিমান সংস্থাগুলোর তিব্বত সরাসরি পার হওয়ার পরিবর্তে চারপাশ দিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।